কাজী সাঈদ ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিনক্ষণ ক্রমশই ঘনিয়ে আসছে। আর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী মাঠও সরগরম হয়ে ওঠেছে। সম্ভাব্য প্রাথীদেরও দৌড়ঝাপ বেড়ে চলছে। আসন্ন এ নির্বাচনী মাঠে আ’লীগের রয়েছে একাধীক প্রার্থী। বিএনপির একাধীক প্রার্থী থাকলেও দলের মনোনয়ন রয়েছে লন্ডনে অব¯’ানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের হাতে। বিএনপির সিদ্ধান্ত লন্ডনে থাকায় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রকাশ্যে মাঠে না নামলেও কেউ কেউ রমজানের ইফতার মাহফিলের কর্মসূচী দিয়ে অনেকটা কৌশলে প্রার্থী হওয়ার জানান দি”েছন। পাশাপাশি লন্ডনে যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যা”েছন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অপরদিকে মহানগর আ’লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিভিন্ন কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী নগর আ’লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল¬াহ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বসে নেই উভয় জোটের শরীক দলগুলোও। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী দলীয় প্রতীক প্রত্যাশী হলেও মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত হবে প্রার্থীতা।
বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই সরগরম হয়ে উঠেছে বরিশাল রাজনীতির মাঠ। বৃহৎ দু’টি রাজনৈতিক দল আ’লীগ-বিএনপি ছাড়াও নড়েচড়ে বসেছে উভয়জোটের শরিকদলগুলোও। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কৌশল নির্ধারণে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকারও নির্দেশনা দিয়েছেন ¯’ানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা। আর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরপরই বরিশালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আ’লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন লেঃ কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম, বরিশাল মহানগর আ’লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, যুবলীগ নেতা মাহামুদুল হক খান মামুন। এই তিন প্রার্থীর মধ্যে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ তাদের একমাত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। নগর আ’লীগের দৃষ্টিতে নিজ দল ও সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে সাদিক আব্দুল্লাহই যোগ্য প্রার্থী। সাদিক আব্দুল্লাহর নাম ঘোষণার পর থেকেই বিএনপির দূর্গ হিসেবে পরিচিত বরিশাল মহানগরীর অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে জটিল ও কঠিন হিসেব নিকেশ শুরু হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্যসব দলের যেমন তেমন প্রার্থী নৌকার জোয়ারে ভেসে যাবে বলেও নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অপরদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বরিশাল বিএনপির অভিভাবক খ্যাত কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডঃ মজিবর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডঃ বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি দখিনা বিএনপির সর্বজনপ্রিয় নেতা এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি দলের ত্যাগী নির্যাতিত নেতা আলহাজ্ব এবায়েদুল হক চাঁন। অসন্ন নির্বাচনে উল্লেখিত চার প্রার্থীর যে কেউ হতে পারেন বিএনপির মনোনয়নে আগামীর মেয়র প্রার্থী। ২৫ বর্গ কিলোমিটারের পৌর এলাকাকে নিয়ে ৫৭ কিঃ মিঃ এ উন্নীত করে ২০০২ সালের ২৪ জুলাই বিসিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে ২০০৩ সালে দলীয় মনোনয়নে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত বসিসি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছেও রহস্যজনক কারনে প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের কাছে হেরে যান। পরবর্তী ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হিরনকে পরাজিত করে বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন।
দলীয় ও সংশ্লিষ্ট সুত্রমতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী দলীয় প্রতীক প্রত্যাশী হলেও মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত হবে প্রার্থীতা। তবে ¯’ানীয়ভাবে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ, সিপিবি-বাসদ প্রার্থীতা চূড়ান্ত বলে দাবি করছে। কিš‘ বিএনপি প্রায় চুপচাপই রয়েছে এখনও। সেইসঙ্গে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস। তাদের দাবি বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হবে। চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ হবে বিসিসি মেয়রের কার্যকাল। গত ২৯ মে নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করে দিয়েছে কমিশন। আগামী ৩০ জুলাই হবে বিসিসি নির্বাচন।
নির্বাচনের বিষয়ে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, বিসিসি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় আমরা যেমন আনন্দিত, তেমনি বরিশাল মহানগরের মানুষ উৎফুল্ল। প্রায় দুই বছর আগ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে ইতিমধ্যে ¯’ানীয়ভাবে প্রার্থীর বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রার্থী হিসেবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল¬াহকে নিয়ে আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে মিটিং করেছি। যা এখনও চলমান। তৃণমূল পর্যায়ে রোজার আগে থেকে আমরা ইউনিট কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। বরিশালে ১০৪টি কেন্দ্র রয়েছে, সে অনুযায়ী আমাদের প্র¯‘তি প্রায় সম্পন্ন। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য বরিশালের জনগণ নৌকার পক্ষে আসন্ন ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে সমর্থন দেবে। অপরদিকে, নির্বাচনী কৌশলগত কারণে অনেক কিছুই খোলাসা করে বলতে নারাজ বিএনপি। তবে সিটি নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে বিএনপি প্রস্তুত বলে দাবি করেছেন বিএনপি’র বরিশাল জেলা দক্ষিণের সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী এবায়েদুল হক চাঁন। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সেন্টার কমিটি গঠন করা শুরু করে দিয়েছি। আমাদের কিছু নির্বাচনী কৌশল রয়েছে, সবকিছু আমরা আগাম বলতে পারছি না। আমরা নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি। তবে খুলনার দিকে যদি তাকাই তবে নির্বাচন নিরপেক্ষ আশা করতে পারি না। বাইরের বিভিন্ন এলাকার লোকজন এই শহরে আসবে প্রচার-প্রচারণা চালাবে এটা হয় না। আমাদের দাবি নির্বাচনকালীন সময়ে ভোটারের বাইরে কোনো লোক এখানে আসতে পারবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী দিতে হবে। নির্ভরযোগ্য বিএনপির একটি সুত্র জানায়, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাকে দলীয় প্রার্থী করা হবে সেই সিদ্ধান্ত লন্ডনে অব¯’ানরত তারেক রহমানের কাছে। তাঁর সিদ্ধান্তই হবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তাই বিএনপির একাধীক প্রার্থী থাকলেও কেউ প্রকাশ্য না হয়ে কেন্দ্রে তদবির লবিং অব্যাহত রেখেছে। বরিশাল জেলা জাতীয় পাটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পার্টি ৩০টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের ভোটের কেন্দ্র কমিটি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী দেওয়ার মধ্য দিয়ে এবার নির্বাচনী যুদ্ধে জাতীয় পার্টি থাকবে এবং আমরা জয়লাভ করব বলে বলেন তিনি। জেলা নির্বাচন অফিসার মো. হেলাল উদ্দিন খান বলেন, মাঠ পর্যায়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বশেষ ভোটার তালিকা আমরা হাতে পেয়েছি। ভোট কেন্দ্রের খসরা আমরা প্রস্তুত করেছি। কমিশনের নির্দেশনা পেলে আমরা এটা প্রকাশ করব। শুনানি গ্রহণের মাধ্যমে যা চূড়ান্ত করা হবে। আশাকরি আমরা সুষ্ঠু, সুন্দর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সক্ষম হবো। ২০১৩ সালের বিসিসি নির্বাচনে বরিশালের ভোটার ছিলো দুই লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন, আর বর্তমানে হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটারের সংখ্যা দুই লাখ ৪১ হাজার ৯৫৯ জন। যা গতবারের চেয়ে ৩০ হাজার ৭০২ জন বেশি।
Leave a Reply